করোনা মহামারির এক স্থবিরাবস্থা কাটিয়ে গত দেড় বছরে শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামো উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। ফিরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রমের গতিশীলতা। গবেষণার ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে নতুন উদ্যম। আর এ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন-এর বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনার সংকটময় সময়ে ২০২১ সালের ২৫ মে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম উপাচার্য হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। তখন সারাদেশে সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য কার্যক্রমও হয়ে পড়েছিলো স্থবির। এ পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করলে তাঁর সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা প্রায় দেড় বছর ধরে পড়ে থাকা শত কোটি টাকারও বেশি অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ সচল করাও ছিলো চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ায় তিনি যোগদানের পরপরই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও ভৌত অবকাঠামো নির্মাণসহ সকল কাজেই গতি ফিরে এসেছে।

একাডেমিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিঃ বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক বিএনকিউএফ ও বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল-বিএসি’র গাইডলাইন অনুসরণ করে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে আউটকাম বেজড এডুকেশন (ওবিই) কারিকুলা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম অবস্থানে রয়েছে। আন্ডারগ্র‍্যাজুয়েট ছাড়াও মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য অভিন্ন একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে এই একাডেমিক ক্যালেন্ডার মেনে বিশ্বমানের ওবিই কারিকুলার ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যুগোপযোগী শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নয়ন নীতিমালা সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের অনলাইন এবং অফলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত অর্ডিনেন্স সংশোধন করা হয়েছে। এখন যে কোনো পরিস্থিতিতে ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব হবে। প্রত্যেক ডিসিপ্লিনে স্মার্ট ক্লাসরুম করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ বছরের মধ্যে ৭টি ডিসিপ্লিনে স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরির কাজ শেষ হবে। আইসিটি সেলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিজিটালাইজেশনে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ও ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম বহির্বিশ্বে তুলে ধরার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুল এবং এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিনের উদ্যোগে পৃথক দুটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও ইকোটক্সিকোলজি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং জার্মানির ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথভাবে ২১তম N AERUS সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনলাইনে আবাসিক হলের সিট বরাদ্দ দেওয়ার কার্যক্রম চালু হয়েছে। সিএসই ডিসিপ্লিনে সেন্ট্রালাইজড কম্পিউটিং সিস্টেম উদ্বোধন করা হয়েছে। এর ফলে এক পিসির সার্ভার, মনিটর ব্যবহার করে বহুসংখ্যক কম্পিউটারে কার্যক্রম সম্পাদন করা যাবে, যা নতুন উদ্ভাবন। এছাড়া ডিভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিনে ডিভেলপমেন্ট ইনফরমেটিভ ল্যাব এবং ইংরেজি ডিসিপ্লিনে ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।

এছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ইনোভেশন হাব তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে একটি সেন্ট্রাল ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে একাডেমিক ফিডব্যাক গ্রহণে ফিডব্যাক ফরম অনুমোদিত হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সব ডিসিপ্লিনের তা চালু হয়েছে।

গবেষণা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধি তথা নবীন প্রবীণ গবেষকদের গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে গবেষণার অনুদান বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬২টি গবেষণা প্রকল্পে দুই কোটি টাকারও বেশি অনুদানের চেক প্রদান করা হয়েছে। চলতি বছর এই বরাদ্দ চার কোটি টাকায় উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা অনুদান প্রবর্তন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭৭ জন গবেষককে ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকা আনুষ্ঠানিভাবে গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে নবীন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রভাষক পদে নতুন যোগদানকারী ২৮ জন প্রভাষকের ১০ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ইন্টারন্যাশনাল হাইফের জার্নালে গবেষণা প্রকাশনায় রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদানের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।

গবেষণাগারের পরিবেশ উন্নয়ন ও পরিসর বৃদ্ধি করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে ইউনিভার্সাল টেস্টিং মেশিন (ইউটিএম) স্থাপন করা হয়েছে। প্রত্যেক ডিসিপ্লিনের গবেষণাগারের জন্য নতুন নতুন যন্ত্রপাতির সংস্থান করা হচ্ছে।

অবকাঠামো উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশোধিত জ্যানে প্রকল্পের আওতায় শতাধিক কোটি টাকা বায়ে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করোনার প্রাক্কালে শুরু হয়। কিন্তু গত দেড় বছরে করোনা মহামারির প্রভাব এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে তা স্থবির হয়ে পড়ে। উদ্ভূত হয়। জটিল সমস্যা । তবে সব জটিলতা কাটিয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে উপাচার্যের নেতৃত্বে সম্মুখযাত্রায় এগিয়ে চলেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।